বৃহস্পতিবার ২২শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী স্যার ফজলে হাসান আবেদ

  |   শনিবার, ১৮ মে ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   101 বার পঠিত

বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী স্যার ফজলে হাসান আবেদ

স্যার ফজলে হাসান আবেদ ছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম কৃতি সন্তান। তার হাত ধরেই প্রতিষ্ঠা লাভ করে বাংলাদেশ রুরাল অ্যাডভান্সমেন্ট কমিটি (ব্র্যাক)। জীবদ্দশায় তিনি দেশে ও দেশের বাইরে অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ব্রিটিশ সরকার তাকে নাইটহুডে ভূষিত করে। নিজের প্রতিষ্ঠিত এনজিওর মাধ্যমে সারাবিশ্বে তিনি বাংলাদেশকে তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের তৃণমূল মানুষের সেবা করতে গিয়ে ব্র্যাক প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। মাত্র এক লাখ কর্মী নিয়ে শুধু বাংলাদেশেই নয়, পৃথিবীর ১১টি দেশের ১২০ মিলিয়ন মানুষকে বিভিন্ন সেবা দিয়ে চলেছে ব্র্যাক। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনন্য অবদান রাখায় স্যার ফজলে হাসান আবেদ আন্তর্জাতিক অসংখ্য পুরস্কার ও স্বীকৃতিতে ভূষিত হয়েছেন। উদ্যমী, সফল ও স্বপ্নদ্রষ্টা এই মানুষটি নশ্বর পৃথিবীকে বিদায় বললেও তার কর্মে বেঁচে থাকবেন ঠিকই।

ফজলে হাসান আবেদ ১৯৩৬ সালের ২৭ এপ্রিল হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচংয়ে জন্মগ্রহণ করেন। সিদ্দিক হাসান-সৈয়দা সুফিয়া খাতুনের ঘরে জন্ম নেওয়া আবেদের শিক্ষাজীবনের শুরু হবিগঞ্জে। ১৯৫২ সালে ম্যাট্রিক ও১৯৫৪ সালে নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষে ওই বছরই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ভর্তি হন। ১৯৫৬ সালে তিনি স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে নেভাল আর্কিটেকচারে পড়াশোনার জন্য দেশত্যাগ করেন। ১৯৫৮ সালে গ্লাসোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স অসমাপ্ত রেখে লন্ডনে কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টিংয়ে ভর্তি হন। ১৯৬২ সালে শিক্ষাজীবন শেষ করে তিনি কানাডায় চাকরি শুরু করেন। ১৯৬৮ সালে দেশে ফিরে তদানীন্তন পাকিস্তানের শেল ওয়েল কোম্পানিতে সিনিয়র করপোরেট এক্সিকিউটিভ হিসাবে যোগ দেন।

ফজলে হাসান আবেদ ছিলেন সফল সমাজকর্মী। সত্তরের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে তিনি উপকূল এলাকা মনপুরায় গিয়ে ত্রাণকাজ পরিচালনা করেন। এরপরপরই দেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। তখন তিনি লন্ডনে চলে যান। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’ এবং ‘হেলপ বাংলাদেশ’ নামে দুটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। যুদ্ধ শেষে তিনি দেশে ফিরলেও আর চাকরিতে যোগ দেননি। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে ভারত-প্রত্যাগত শরণার্থীদের জরুরি ত্রাণ ও পুনর্বাসন কাজে আত্মনিয়োগ করেন। এ লক্ষ্যে তিনি ব্র্যাক প্রতিষ্ঠা করে সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত শাল্লা এলাকায় ফিরে আসা শরণার্থীদের নিয়ে আর্থসামাজিক উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করেন। ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ব্র্যাক। যদিও এই প্রতিষ্ঠানটি মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন অ্যাসিস্ট্যান্স কমিটি নামে শরণার্থীদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করত।

এরপর থেকে তিনি ব্র্যাকের সঙ্গেই ছিলেন। কবি বেগম সুফিয়া কামাল, অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক, কাজী ফজলুর রহমান, আকবর কবীর, ভিকারুল ইসলাম চৌধুরী, এস আর হোসেন এবং ফজলে হাসান আবেদ, এই সাতজনকে নিয়ে ১৯৭২ সালে ব্র্যাকের গভর্নিং বোর্ড গঠিত হয়। তখন তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালনের পর তাকে এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ সময়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন ব্র্যাকের আরো কয়েকটি সহপ্রতিষ্ঠান।

তিনি ব্র্যাককে পৌঁছে দিয়েছেন বিশ্বের দরবারে। বর্তমানে এশিয়া ও আফ্রিকার ১১টি দেশে এর কার্যক্রম বিস্তৃত। ২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত টানা চার বছর জেনেভাভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সংস্থা ‘এনজিও অ্যাডভাইজা’ কর্তৃক ব্র্যাক বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় এনজিও হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।

দারিদ্র বিমোচনে বিশেষ ভূমিকার জন্য ব্রিটিশ সরকার ২০০৯ সালে তাকে ‘নাইটহুড’ ভূষিত করেন।

তিনি ১৯৯৪ সালে কানাডার কুইনস ইউনিভার্সিটি থেকে ‘ডক্টর অব ল’ এবং ২০০৩ সালে যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে ‘ডক্টর অব এডুকেশন’ ডিগ্রি লাভ করেন। সামাজিক উন্নয়নে তার অসামান্য ভূমিকার জন্য তিনি র‌্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার (১৯৮০), ইউনেস্কো নোমা পুরস্কার (১৯৮৫), এ্যালান শন ফেইনস্টেইন ওয়ার্ল্ড হাঙ্গার পুরস্কার (১৯৯০), ইউনিসেফ মরিস পেট পুরস্কার (১৯৯২), সুইডেনের ওলফ পাম পুরস্কার (২০০১), শোয়াব ফাউন্ডেশন “সামাজিক উদ্যোক্তা” পুরস্কার (২০০২), গ্লেইটসম্যান ফাউন্ডেশন পুরস্কার (২০০৩), জাতীয় আইসিএবি (২০০৪), জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থার মাহবুব-উল-হক পুরস্কার (২০০৪), সামাজিক উন্নয়নে অসামান্য ভূমিকার জন্য গেটস ফাউন্ডেশনের বিশ্ব স্বাস্থ্য পুরস্কার (২০০৪), হেনরি আর. ক্রাভিস পুরস্কার (২০০৭), প্রথম ক্লিনটন গ্লোবাল সিটিজেন পুরস্কার (২০০৭), পল্লি কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন আজীবন সম্মাননা পুরস্কার (২০০৭), ডেভিড রকফেলার পুরস্কার (২০০৮), এন্ট্রাপ্রেনিওর ফর দ্য ওয়ার্ল্ড পুরস্কার (২০০৯), ওয়াইজ পুরস্কার (২০১১), সেন্ট্রাল ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি ওপেন সোসাইটি পুরস্কার (২০১৩), লিও তলস্তয় আন্তর্জাতিক স্বর্ণপদক (২০১৪), বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার (২০১৫) লাভ করেন।

তিনিই একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে নাইটহুড পুরস্কার লাভ করেন।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৪:২৯ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১৮ মে ২০২৪

প্রতিদিনের অর্থনীতি |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

May 2024
SSMTWTF
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031

এক ক্লিকে বিভাগের খবর

সম্পাদক:
এম এ খালেক
Contact

মাকসুম ম্যানশন (৪র্থ তলা), ১২৭, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

০১৮৮৫৩৮৬৩৩০

E-mail: protidinerarthonity@gmail.com