বৃহস্পতিবার ২২শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যা থাক‌ছে এবারের বাজেটে

জাতীয় সংসদে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ

  |   শুক্রবার, ০৭ জুন ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   59 বার পঠিত

জাতীয় সংসদে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ

জাতীয় সংসদে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ উত্থাপন করা হলো। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট; যার আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। পরে এটি সংশোধন করে ৭ লাখ ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা করা হয়। ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার’ নিয়ে এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে ‌পেশ করা হয়।

বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বিকেলে জাতীয় সংসদে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার ও স্মার্ট সমাজব্যবস্থা নির্মাণকল্পে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী তার প্রস্তাবিত বাজেটে সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছেন ২০৪১ সালের জন্য আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের ওপরে।

জাতীয় সংসদে দেয়া বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, স্মার্ট বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় হবে কমপক্ষে ১২ হাজার ৫০০ মার্কিন বিলিয়ন ডলার, ঘুচে যাবে চরম দারিদ্র্য এবং সাধারণ দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকবে ৩ শতাংশ মানুষ, মূল্যস্ফীতি হবে ৪-৫ শতাংশের মধ্যে, বাজেট ঘাটতি নেমে আসবে ৫ শতাংশের নিচে, রাজস্ব-জিডিপির অনুপাত হবে ২০ শতাংশ এবং বিনিয়োগ বেড়ে হবে জিডিপির ৪০ শতাংশ।

মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের বাজারে সরবরাহ শৃঙ্খলে ত্রুটি এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে ডলারের অবমূল্যায়নের কারণে বাজারে মূল্যস্ফীতির উচ্চহার বিরাজ করছে। ২০২২ সালের জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ডলারের বিপরীতে টাকার সাড়ে ২৫ শতাংশ অবমূল্যায়ন হয়েছে। এ কারণে আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় বাজারে মূল্যস্ফীতি প্রকট আকার ধারণ করেছে।

এবা‌রের বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর বহির্ভূত কর ধরা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। আর কর ছাড়া প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির সক্ষমতা বাড়াতে হলে রাজস্ব আহরণের কোনো বিকল্প নেই; যেখানে সমতুল্য অনেক দেশের চেয়ে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। বাংলাদেশের কর জিডিপির অনুপাত ৮ শতাংশের নিচে, যেখনে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম এবং থাইল্যান্ডের কর-জিডিপি অনুপাত ১০ শতাংশের ওপর।

বাজেটে ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করা হবে ৩৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এতে নিট বৈদেশিক ঋণ দাঁড়াবে ৯০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।

অভ্যন্তরীণ ঋণ নেয়া হবে ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেয়া হবে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি, যার ৭২ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা দীর্ঘমেয়াদি ঋণ এবং ৬৪ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা স্বল্পমেয়াদি ঋণ। ব্যাংকবহির্ভূত ঋণ নেয়া হবে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ঋণের সুদ পরিশোধের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ৯৩ হাজার কোটি টাকা। আর বৈদেশিক ঋণের সুদ ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

প্রতিবারের বাজেটের মতো এবারের বাজেটেও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট ও ভূমির মতো বাজেটে স্থাবর সম্পত্তি জন্য নির্দিষ্ট কর এবং নগদসহ অন্যান্য পরিসম্পদের ওপর ১৫ শতাংশ কর পরিশোধ করে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ডেটা ভেরিফিকেশন সিস্টেম (ডিভিএস) চালু হওয়ার ফলে বিভিন্ন কোম্পানির অপ্রদর্শিত আয় ও পরিসম্পদ প্রদর্শনে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া, রিটার্ন দাখিলে করদাতার অজ্ঞতাসহ অনিবার্য কিছু কারণে অর্জিত সম্পদ প্রদর্শনে ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকতে পারে। এ অবস্থায় করদাতাদের আয়কর রিটার্নে এ ত্রুটি সংশোধনের সুযোগ দেয়া হবে।

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের উত্থাপিত বাজেটের মোট ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পেয়েছে জনপ্রশাসন খাত।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের খাতভিত্তিক বরাদ্দে পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের চিত্র-২ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পরিচালন ও উন্নয়ন বরাদ্দের ভিত্তিতে মোট বাজেটে ২২ দশমিক ১ শতাংশ খরচ হবে জনপ্রশাসন খাতে। এ খাতে মোট ১ লাখ ৭৫ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

জনপ্রশাসন খাতের পরে বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাত। মোট বাজেটের ১৪ শতাংশ খরচ হবে এ খাতে, যেখানে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা।

খাতওয়ারি বরাদ্দের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে আছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত। এ খাতে বাজেটের ১০ দশমিক ৪ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যা টাকার অঙ্কে ৮২ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা।

পরিবহন খাতের পর বাজেটের ৬ শতাংশের হিস্যা নিয়ে চতুর্থ অবস্থানে আছে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাত। এ খাতে মোট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৪৭ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকা।

এবারের বাজেটে কৃষি খাতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। পাঁচ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনে কৃষি খাতে মোট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৪৭ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা।

এর বাইরে সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাতে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ, প্রতিরক্ষা খাতে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ, স্বাস্থ্য খাতে ৫ দশমিক ২ শতাংশ, জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা খাতে ৪ দশমিক ২ শতাংশ এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে মোট ৩ দশমিক ৮ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম ও দারিদ্র নিরসনে মোট বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।

জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উত্থাপনকালে এ খাতে, ১ লাখ ৩৬ হাজার ২৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ছিল ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা।

এ খাতের আওতায় ভাতাপ্রাপ্ত প্রবীণদের সংখ্যা বাড়িয়ে ৬০ লাখ ১ হাজার জনে উন্নীত করা হবে। এ সংখ্যক প্রবীণ জনগোষ্ঠীর জন্য আগামী অর্থবছরে ৪ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এছাড়া ভাতাপ্রাপ্ত বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা মহিলার সংখ্যা ২৫ লাখ ৭৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২৭ লাখ ৭৫ হাজারে উন্নীত করা হয়েছে। এ বাবদ ১ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে বর্তমানে ৬ হাজার ৮৮০ জনকে ভাতা দেয়া হচ্ছে যা আগামী অর্থবছরে বাড়িয়ে ১২ হাজার ৬২৯ জনে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এছাড়া আগামী অর্থবছরে ৯০ হাজার ৮৩২ জন অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে ভাতার আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

অন্যদিকে প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষায় আগামী অর্থবছরে ভাতাভোগীর সংখ্যা ৩ লাখ ৩৪ হাজার বাড়ানো হচ্ছে। ফলে ভাতাপ্রাপ্তের সংখ্যা ৩২ লাখ ৩৪ হাজার জনে উন্নীত হতে যাচ্ছে। এছাড়া প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের উপবৃত্তির পরিমাণ ৯৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায় উন্নীত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সামাজিক নিরাপত্তা ও দারিদ্র্য নিরসনের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, সামাজিক নিরাপত্তার সুফল কার্যকরভাবে উপকারভোগীদের কাছে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে সর্বমোট ১১৫টি সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের ৩৪টি ক্যাশভিত্তিক কর্মসূচির মধ্যে ১৯টি কর্মসূচির অর্থ ইলেকট্রনিক উপায়ে গভর্নমেন্ট টু পারসন (জিটুপি) পদ্ধতিতে সরাসরি উপকারভোগীর ব্যাংক হিসাব বা মোবাইল ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হ‌চ্ছে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৭:৫৫ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৭ জুন ২০২৪

প্রতিদিনের অর্থনীতি |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

কমলো সোনার দাম
(150 বার পঠিত)
advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

June 2024
SSMTWTF
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930 

এক ক্লিকে বিভাগের খবর

সম্পাদক:
এম এ খালেক
Contact

মাকসুম ম্যানশন (৪র্থ তলা), ১২৭, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

০১৮৮৫৩৮৬৩৩০

E-mail: protidinerarthonity@gmail.com