
নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ১২ মার্চ ২০২৪ | প্রিন্ট | 91 বার পঠিত
লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজার। মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের সংসার চালাতে যেন হাহাকার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যেখানে নিত্য দিনের বাজার করতেই হিমশিম খেতে হয়, সেখানে যুক্ত হয়েছে রমজানের বাড়তি খরচ। বছর ঘুরতেই কয়েকগুণ বেড়েই চলছে একেকটি পণ্যের দাম। মাঠেঘাটে সরকারের নীতিনির্ধারকরা বাজার নিয়ন্ত্রণে যতো যাই বলছেন কোনো কিছুতেই যেন কাজ হচ্ছে না। শুধু রোজার পাঁচটি পণ্যেই গড়ে ব্যয় বাড়বে প্রায় ৮৪ শতাংশ। কার্যত বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ সরকার।
২০২২ সালে রোজায় প্রতি কেজি চিনির দাম ছিল ৭৮-৮০ টাকা। ২০২৩ সালের রোজায় প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয় ১১৫-১২০ টাকায়। এবারের রোজায় সেই চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা দরে। চিনির দাম বেড়ে যাওয়ায় এবার সাধারণ মানুষকে অনেকটা বাড়তি ব্যয় করতে হবে।
শুধু চিনি নয়, এবার রোজায় ব্যয় বাড়বে ছোলা, ডাল, তেল, আটা, ময়দা, পেয়াজ, আলু-বেগুন সবকিছুতেই। এর মধ্যে রোজার আগে গত এক সপ্তাহে বাজারে কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। আবার অনেক কিছুর দাম আগে থেকেই চড়া।
২০২৩ সালের রোজায় খুচরা বাজারে যে ছোলা ৯৫ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল এ বছর একই ছোলা ১১০ থেকে ১১৫ টাকা। গত বছর রোজায় যে অ্যাংকর ডাল ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল তা এ বছর প্রতি কেজি ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। খেসারির ডাল মানভেদে ১১৫ থেকে ১২৫ টাকা। গত বছর রোজায় যে পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৪০ টাকায় পাওয়া গেছে এ বছর তা বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। এ বছর রোজায় পেঁয়াজের দাম ১১০ থেকে ১২০ টাকা। গত বছর রোজায় ২০-২৫ টাকায় যে আলু পাওয়া গেছে তা এবার ৩২ থেকে ৪০ টাকা।
সারাদিন রোজা শেষে ইফতারে একটি-দুটি খেজুর খাবেন, সেটার জন্য দ্বিগুণ বরাদ্দ রাখতে হবে এবারের রোজায়। কারণ গত রোজায় যে খেজুর ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল এ বছর তার দাম ৩৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা। সে হিসাবে এবার প্রতি কেজি খেজুর কিনতে ক্রেতাকে অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে ২০০ টাকা। শুধু খেজুর নয়, সব ফলের দরই চড়া। সেইসঙ্গে ইফতার তৈরিতে ব্যবহৃত আটা ময়দা থেকে শুরু করে লেবু, শসা, টমেটো সবকিছুর দামই বাড়তি।
যদিও গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়েছে। তারপরও গত বছরের তুলনায় দাম এখনও কম। এ বছর বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম ২২০ থেকে ২৩৫ টাকা। গত বছর এ সময় দর ছিল ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা। সোনালী জাতের মুরগির কেজি ৩০০ থেকে ৩১০ টাকা ছিল এক বছর আগে, যা এখনই বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকায়।
অন্যদিকে এ বছর গরুর মাংসে ৫০ থেকে ৮০ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে। এ বছর রোজায় প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকায়। গত বছর রোজার আগে ছিল ৭০০ থেকে ৭২০ টাকা।
অন্যদিকে পাঙাশ, কই, রুই, কাতলাসহ প্রায় সব ধরনের মাছের কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। ডিমের দামও গত বছরের তুলনায় কিছুটা বাড়তি। প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৪৪ থেকে ৪৫ টাকায়।
দেশে সোমবার দিবাগত রাতে সেহরি খাওয়ার পর মঙ্গলবার থেকে রোজা শুরু হবে। বাজারে ইতোমধ্যে রোজার কেনাবেচা শুরু হয়ে গেছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, কেনাবেচা খুব বেশি নয়। কারণ, দ্রব্যমূল্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মুদি দোকান রব স্টোরের মালিক আব্দুর রব ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এবারের রোজায় বাজারে তেমন বাড়তি বেচাকেনা দেখা যাচ্ছে না। মানুষের হাতে হয়তো টাকাপয়সা কম আছে।’
দাম বৃদ্ধির কারণ উল্লেখ করে আব্দুর রব বলেন, ডলারের মূল্য ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধির পাশাপাশি ঋণপত্র (এলসি) খোলা নিয়ে নানা জটিলতার কারণে সার্বিকভাবে পণ্যের আমদানি ব্যয় বেড়েছে। ফলে পণ্যের দামেও সেটির প্রভাব দেখা যাচ্ছে।’
এই বাজারে রোজার খাদ্যসামগ্রী কিনতে আসা বিল্লাল মিয়া বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর সবকিছুর দামই বাড়তি। চাল, ডাল, তেল, চিনি- সব জিনিসের দামই বেশি। বাজারের এই অবস্থা হলে কীভাবে খেয়ে রোজা রাখবো। তিনি বলেন, শুধু যেসব দ্রব্য না কিনলেই নয়, সেসবই কিনতে হচ্ছে।
রোকসানা আক্তার নামে একজন ক্রেতা বলেন, রোজার আগ মুহূর্তে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে। এ জন্য মানুষ মুরগির মাংসের দিকে ঝুঁকছিল। সামনে রোজা, ঠিক এখনই মুরগির দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজার খরচ আরেক দফা বেড়ে যাবে। শক্ত হাতে বাজার নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান এই গৃহিণী।
Posted ৭:৫১ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১২ মার্চ ২০২৪
প্রতিদিনের অর্থনীতি | Protidiner_Arthonity