শুক্রবার ২৩শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঘূর্ণিঝড় রিমাল

সব মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল

  |   রবিবার, ২৬ মে ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   61 বার পঠিত

সব মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল

ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে দুর্যোগ মোকাবিলা ও দুর্গত মানুষের পাশে থাকার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ সব মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। রবিবার (২৬ মে) দুর্যোগ মোকাবিলা প্রস্তুতির আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান।

প্রতিন্ত্রী বলেন, ৮ লাখের বেশি মানুষ ইতোমধ্যে আশ্রয় কেন্দ্রে এসেছেন। বাকিদের আসার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে। উপকূলীয় অঞ্চলে আপাতত স্কুল খোলা থাকবে তবে ক্লাস বন্ধ। গতকালকে আমরা বলেছিলাম আজকে ভোর থেকে এটা শুরু হতে পারে। ঝড়ের গতি কম ছিল বলে আজ ভোরে আসেনি। গতকালকে গতিবেগ ছিল ১৬ থেকে ১৭ কিলোমিটার। ভোরে এটার গতি কমে দশের নিচে চলে আসে, পরবর্তীতে ৬ কিলোমিটারে নিয়ে আসে। যার জন্য এটা সময় মতো এখনো পৌঁছেনি। তবে আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, এটা মহাবিপদ সংকেতে আমাদের পরিণত হয়েছে এবং আজ সন্ধ্যা লাগাদ ঘূর্ণিঝড়ের প্রথম ভাগ অতিক্রম শুরু হবে। মধ্যরাতে মূল যে ঝড় সেটা বাংলাদেশ অতিক্রম করবে।

তিনি বলেন, ঝড়ের কারণে উপকূলীয় এলাকায় ১০ থেকে ১২ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত প্লাবিত হতে পারে। যদি জোয়ার থাকে এটা আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রেমালের প্রভাবে সাতক্ষীরা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত পুরো এলাকাটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এজন্য আমরা সবাইকে নিয়ে আজকে সভা করেছি। সেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি। এখন থেকে ঝড় শেষ না হওয়া পর্যন্ত সব মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যে সমস্ত যানবাহন লঞ্চ-স্টিমার চলাচল করছে সেগুলো বন্ধ থাকবে। এমনকি বঙ্গবন্ধু যে টানেল রয়েছে সেটি আজকে সন্ধ্যা থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।

মন্ত্রী বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে সেই অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা সার্বিকভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে খাবার এবং বিভিন্ন উপকরণ পৌঁছে গেছে। মানুষকে নিরাপদে আশ্রয় নেওয়ার জন্য সর্বাত্মকভাবে কাজ করা হচ্ছে। আমাদের মেডিকেল টিমগুলো প্রস্তুত রয়েছে। সেনাবাহিনী যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসও প্রস্তুত রয়েছে। পেছনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এই ঘূর্ণিঝড়কে আরো শক্তভাবে মোকাবিলা করার জন্য আমরা সমস্ত প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। আশা করি নির্দেশনাগুলো যেভাবে দিচ্ছি সবাই যদি সে অনুসারে পালন করে, এই দুর্যোগ পূর্বের মতো সক্ষমভাবে মোকাবিলা করতে পারব।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় রেমালের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (ক্রমিক নম্বর-১০) আবহাওয়া বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। এটি রোববার সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ২৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে রোববার সন্ধ্যা বা মধ্যরাত নাগাদ মোংলার কাছ দিয়ে সাগর আইল্যান্ড (পশ্চিমবঙ্গ) ও বাংলাদেশের পটুয়াখালীর খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম করতে পারে। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি শুরু হয়েছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও জানিয়েছে, পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপৎ সংকেত নামিয়ে এর পরিবর্তে ১০ নম্বর মহাবিপৎ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর ১০ নম্বর মহাবিপৎ সংকেতের আওতায় থাকবে। কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপৎসংকেত নামিয়ে এর পরিবর্তে ৯ নম্বর মহাবিপৎ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর ৯ নম্বর মহাবিপৎ সংকেতের আওতায় থাকবে।

আবহাওয়াবি খো. হাফিজুর রহমান জানান, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার নদীবন্দরগুলোকে ৪ নম্বর নৌ-মহাবিপৎ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুটের বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারী (৪৪-৮৮ মিমি/২৪ ঘণ্টা) থেকে অতিভারী (৮৯ মিমির বেশি/২৪ ঘণ্টা) বর্ষণ হতে পারে। অতিভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হলো।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৩:৩৬ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২৬ মে ২০২৪

প্রতিদিনের অর্থনীতি |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

কমলো সোনার দাম
(151 বার পঠিত)
advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

May 2024
SSMTWTF
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031

এক ক্লিকে বিভাগের খবর

সম্পাদক:
এম এ খালেক
Contact

মাকসুম ম্যানশন (৪র্থ তলা), ১২৭, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

০১৮৮৫৩৮৬৩৩০

E-mail: protidinerarthonity@gmail.com