শুক্রবার ২৩শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অসম প্রতিযোগিতা দেশের বীমা খাতকে আরো সমস্যায় ফেলবে : সাঈদ আহমদ

  |   মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   97 বার পঠিত

অসম প্রতিযোগিতা দেশের বীমা খাতকে আরো সমস্যায় ফেলবে : সাঈদ আহমদ

বীমা আহরণের ক্ষেত্রে দেশের বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটা অসম প্রতিযোগিতা চলছে। এটাকে আমরা বন্ধের জন্য নীতি-নির্ধারকদের সাথে কথা বলবো। এই অসম প্রতিযোগিতা দেশের বীমা খাতকে আরো সমস্যায় ফেলবে বলে জানান বাংলাদেশ ইন্স্যরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) প্রেসিডেন্ট সাঈদ আহমদ।

রাজধানীর পল্টনস্থ ক্যাপিটালে মার্কেট জার্নালিষ্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত সিএমজেএফ টক-এ তিনি এ কথা করেন। সিএমজেএফ সভাপতি গোলাম সামদানি ভূইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবু আলী।

সাঈদ আহমদ বলেন, বীমা কোম্পানি জনগণের টাকা তছরুপ করবে, ছিনিমিনি খেলবে বিআইএ তা হতে দেবে না। আমরা তা মানবো না। আমরা এটা নিয়ে কাজ করবো। কয়েকটি সংস্থার জন্য পুরো খাত প্রশ্নের মূখে পড়বে, এটা হতে দেব না।তিনি বলেন, বীমা কোম্পানি সেবামূলক কাজ করছে। সেখানে তারা সেবার নামে কেন টাকা নেবে, এটা হতে দিতে পানি না। সেবার নামে বাণিজ্য করবেন তা হতে দেবো না।

তিনি আরো বলেন, বীমা খাতে কোনো ধরণের দুর্নীতি সহ্য করা হবে না। নিজে দুনীতি করবো না, অন্যকে দুর্নীতি করতে দেবো না। তিনি বলেন, এই খাতের উন্নয়নে সরকারের ভূমিকা বেশি। কারণ এই খাতের উন্নয়নে পলিসি করার দায়িত্ব সরকারের। সরকার যদি বাধ্যতামূলক করে দেয় তাহলে খাতটির বিকাশ ঘটবে এবং জিডিপিতে অবদান বাড়বে।

সাঈদ আহমদ বলেন, দেশের অর্থনীতি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশের বীমা খাত বৃদ্ধি পাচ্ছে না। দেশের অর্থনীতির আকারের তুলনায় ৮০টি বীমা কোম্পানির সংখ্যা আমার মতে কম। অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার আরো সমন্বয় করা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে বীমা খাতের এক অসাধারণ পরিবর্তনের স্বাক্ষী আমরা। ১৯৭২ সালে জাতীয়করণ, ১৯৭৩ সালে বীমা করপোরেশন আইন অনুযায়ী পূনগঠন, ১৯৮৪ সালে বেসরকারী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোকে অন্তর্ভূক্তিকরণ। প্রতিটি ধাপ এই খাতকে বর্তমান অবস্থানে পৌছে দিয়েছে। আমাদের দেশে ৮০টি বীমা কোম্পানি রয়েছে। ৩৫টি জীবন বীমা এবং ৪৫টি সাধারণ বীমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যারা সম্মিলিতভাবে প্রায় ১.৮৯ কোটি ব্যক্তিকে বীমার আওতায় এসেছে। কিন্তু এতো অগ্রগতির পরেও বাংলাদেশে ইন্সুরেন্স’র অবদান জিডিপির ০.৫ শতাংশ।

তিনি বলেন, যা আন্তর্জাতিক মানের তুলনায় অনেক কম। যেখানে প্রতিবেশী দেশ ভারতে ৪ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ১.২ শতাংশ, পাকিস্তানে ০.৮ শতাংশ।

বিআইএ সভাপতি বলেন, আমাদের বীমা খাতে বর্তমানে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখে। যেমন কভিড-১৯ পরবর্তী পরিস্থিতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, গাজা-ইসরাইল যুদ্ধ, ডলারের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি, মুদ্রাষ্ফীতি বিশ্বব্যাপী, দেশের অর্থনীতির অস্থিরতা, বৈদেশিক মুদ্রার নেতিবাচক রিজার্ভ ইত্যাদির কারণে বীমা খাতের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব হয়নি।

বীমা খাতের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থার মধ্য থেকেও বাংলাদেশের বীমা কোম্পানীগুলো জীবন বীমা খাতে প্রাইভেট বীমা কোম্পানীগুলির উপার্জিত প্রিমিয়াম আয়ের পরিমান ছিল ২০২৩ সালে ১১ হাজার ৪,৮৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বেসরকারী জীবন বীমা খাতের লাইফ ফান্ড ২০২৩ সালে ৩২ হাজার ১,৫৩ কোটি টাকা। বেসরকারী জীবন বীমা খাতে ২০২৩ সালের বিনিয়োগ ৩৬৮,৫৩৬ মিলিয়ন টাকা। বেসরকারী খাতে জীবন বীমা কোম্পানীর মোট সম্পদ ২০২৩ সালে ৪৪ হাজার ২,২০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। নন-লাইফ বীমা খাতে মোট প্রিমিয়াম আয়ের পরিমান ২০২৩ সালে ছিল চার হাজার ২,৩৫ কোটি ১০ লাখ টাকা। নন-লাইফ বীমা কোম্পানীর ২০২৩ সালে সম্পদ এর পরিমান ১১ হাজার ৬৪৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা। নন-লাইফ বীমা খাতে ২০২৩ সালের বিনিয়োগ ৫ হাজার ৭,৭২ কোটি টাকা।

এই খাতের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা তুলে ধরে সাঈদ আহমদ বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিল্পায়ন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি এবং গড় আয়ু বৃদ্ধির পরেও আমাদের ইন্স্যুরেন্স শিল্প এখনও তার পূর্ণ সম্ভাবনা অর্জন করতে পারেনি। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে রয়েছে। এর মধ্যে বীমা সচেতনতা ও সাধারণ মানুষ এবং ব্যবসায়ীরা এখনও বীমার গুরুত্ব ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় এর ভূমিকা পুরোপুরি বোঝে না। নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক নীতিমালার সংস্কার চলমান থাকলেও, কার্যকারিতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে আরও সমন্বয় প্রয়োজন। ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে, গ্রাহকদের আরও সহজে বীমার আওতায় আনা প্রয়োজন। বিশ্বাসের অভাব ও দ্রুততম সময়ে দাবি নিষ্পত্তি, স্বচ্ছতা এবং উন্নত সেবার মাধ্যমে গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করতে হবে।

বর্তমান বীমা খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় করণীয় তুলে ধরে তিনি বলেন, বীমার প্রতি জনগনের আস্থা বৃদ্ধি, সময়মত সকল প্রকার দাবী পরিশোধ, এনজিও কর্তৃক বীমা করার অধিকার রহিত করণ, ব্যাংকের ঋণগ্রহীতাদের জীবনবীমা পলিসি গ্রহণ বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব, বীমা শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বিধি-বিধান প্রণয়ন, ভ্যাট/ট্যাক্স সংক্রান্ত সমস্যাবলীর সমাধান, মটর ইন্স্যুরেন্স বাধ্যতামুলককরণ, বেসরকারী খাতে পুনঃবীমা কোম্পানী গঠন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাথে ভ্যাট, দ্বৈতকর ও করহার হ্রাসকরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী স্থাবর ও অস্থাবর সম্পতির বীমা করা বাধ্যতামূলকরণ। তবে, প্রতিটি চ্যালেঞ্জের মধ্যেই সম্ভাবনা থাকে। নতুন উদ্ভাবন, নীতিমালা সংস্কার এবং কৌশলগত অংশীদারিত্ব কাজে লাগিয়ে আমরা বাংলাদেশের ইন্স্যুরেন্স শিল্পের প্রকৃত সম্ভাবনাকে বাস্তবায়ন করতে পারবো।

 

 

প্রতিদিনের অর্থনীতি/এসএ
Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৩:৪৪ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫

প্রতিদিনের অর্থনীতি |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

March 2025
SSMTWTF
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031 

এক ক্লিকে বিভাগের খবর

সম্পাদক:
এম এ খালেক
Contact

মাকসুম ম্যানশন (৪র্থ তলা), ১২৭, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

০১৮৮৫৩৮৬৩৩০

E-mail: protidinerarthonity@gmail.com