শুক্রবার ১০ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

অনৈতিক কমিশন বন্ধ না হলে বীমা খাতের উন্নয়ন অসম্ভব: শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সূচনা করা অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখা জরুরি

মোঃ মানসুর আলম সিকদার   |   বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   988 বার পঠিত

অনৈতিক কমিশন বন্ধ না হলে বীমা খাতের উন্নয়ন অসম্ভব: শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সূচনা করা অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখা জরুরি

অনৈতিক কমিশন বন্ধ করুন, বীমা খাতকে রক্ষা করুন। অবৈধ কমিশন বন্ধ করতে না পারলে কোনো আইন, সংস্কার, পুস্তক-বিদ্যা, বাস্তব অভিজ্ঞতা, পদবি, লেখনী, উন্নত প্রশিক্ষণ, উচ্চ ডিগ্রি, সভা-সমাবেশ, সেমিনার কিংবা র‌্যালি-কিছুই কাজে আসবে না।

প্রথমেই বাধ্যতামূলকভাবে নন-লাইফ বীমাখাতে অবৈধ কমিশন বন্ধ করতে হবে। এ কাজ করতে হলে অবশ্যই বাস্তব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বীমা ব্যক্তিত্বদের সম্পৃক্ত করা জরুরি। কিন্তু এখানেই মূল বাধা। বীমার নিয়ন্ত্রণভার অবশ্যই অভিজ্ঞ বীমা পেশাজীবীদের হাতে দেওয়া দরকার।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৬ থেকে ১৯৮২ পর্যন্ত বীমা সেক্টরের নিয়ন্ত্রণ অভিজ্ঞ বীমা ব্যক্তিত্বদের হাতে ছিল। সে সময়ে প্রিমিয়ামের ৫০% থেকে ৭০% টাকা লুটপাটের কথা কল্পনাও করা যেত না। অবৈধ কমিশনের কোনো প্রচলনই ছিল না।

১৯৭৬ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান অর্থমন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপদেষ্টা হিসাবে ১৯৭৬-৭৭ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন। সেই বাজেটে বীমা উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়। তখন থেকেই বাংলাদেশে বীমা খাতের সত্যিকারের অগ্রযাত্রা শুরু হয়। তার আমলে কোনো ধরনের অবৈধ কমিশন ছিল না। ১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত তিনি বিশৃঙ্খল সমাজকে রূপান্তর করেন সুসংগঠিত সমাজে।

১৯৮০ সালে ধারাবাহিক অর্থনৈতিক কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন। কৃষিখাতে খাল খনন কর্মসূচির মাধ্যমে সবুজ বিপ্লব ঘটান এবং মাত্র চার বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেন। এমনকি তখন নেপালসহ কয়েকটি দেশে চাল রপ্তানিও করা হয়।

১৯৮০ সালের ডিসেম্বরে তিনি খ্যাতনামা বীমাবিদদের সঙ্গে কুশল বিনিময়কালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বলেছিলেন—“জীবন বীমা কর্পোরেশন ও সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের পাশাপাশি বীমা শিল্পকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিতে হবে।” এর ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং বেকারত্ব দূর হবে।

১৯৮১ সালের ৩ এপ্রিল তিনি বীমা শিল্পকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। দুর্ভাগ্যক্রমে একই বছরের ৩০ মে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। তাই সিদ্ধান্তটির পূর্ণ বাস্তবায়ন তিনি দেখতে পাননি।

পরবর্তীতে বিচারপতি আবদুস সাত্তার রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে ১৯৮২ সালের ১ জানুয়ারি বিষয়টি বাস্তবায়নের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তবে মার্চে সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সামরিক অভ্যুত্থানের ফলে তা অসম্পূর্ণ থেকে যায়।

১৯৮৩ সালে মোটর অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে তৃতীয় পক্ষের মোটর বীমা চালু হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৫-৮৬ সালে এরশাদ সরকারের আমলে বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, ন্যাশনাল লাইফ ও ডেল্টা লাইফসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেওয়া হয়। তখনও বীমা খাত স্থিতিশীল ছিল।

কিন্তু ২০০৮ সাল থেকে আর্থিক খাতের ভয়াবহ অবনতি শুরু হয়। ব্যাংক-বীমা খাতে যারা দানবীয় প্রভাব বিস্তার করেছে, তারা এখনও বহাল তবিয়তে আছে।

আজ দেশের পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে প্রিমিয়ামের টাকা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ৫০% থেকে ৭০% পর্যন্ত লোপাট হয়ে যাচ্ছে বলে সবার মুখে মুখে আলোচনা চলছে। এটি বন্ধ করতে হলে অভিজ্ঞ বীমা ব্যক্তিত্বদের সম্পৃক্ততা ছাড়া কল্পনাও করা যায় না। এ জন্য বীমা কর্মকর্তাদের দায়ী করা যাবে না। দায়ী হচ্ছে অনভিজ্ঞ নীতিনির্ধারক ও অতীতের ফ্যাসিবাদী শাসনামলের দোসররা।

অবৈধ কমিশন আসলে মানি লন্ডারিং-এর আওতায় পড়ে, যার সর্বনিম্ন শাস্তি ১০ বছরের কারাদণ্ড। তাই বীমা খাতকে রক্ষার জন্য এ ধরনের দোসর ও মানি লন্ডারদের হাত থেকে মুক্ত করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

১৯৭৬ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাত ধরেই বাংলাদেশে বীমা খাতের সত্যিকারের অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছিল। তার আদর্শকে ধারণ করে আমাদের অনৈতিক কমিশন বন্ধ করতে হবে এবং বীমা উন্নয়নের যাত্রাকে অব্যাহত রাখতে হবে।

 

লেখক : এমবিএ, এলএলবি
বীমা বিষয়ক লেখক ও কলামিস্ট

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৩:১৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫

প্রতিদিনের অর্থনীতি |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর

সম্পাদক:
এম এ খালেক
Contact

মাকসুম ম্যানশন (৪র্থ তলা), ১২৭, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

০১৮৮৫৩৮৬৩৩০

E-mail: protidinerarthonity@gmail.com