
এম এস রাজীব | বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪ | প্রিন্ট | 78 বার পঠিত
নামে-বেনামে নিয়ম বহির্ভুতভাবে ঋণ প্রদান ও খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণে ব্যাংকিং সেক্টরে ক্রমাগত আতঙ্ক বাড়ছে। এই খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংক কি দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে এরকম প্রশ্ন তুলেছে অনেকে। খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণে আমানতকারিদের সংরক্ষিত অর্থ ফেরৎ দিতে পারবে না তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। সর্বোপরি ব্যাংক দেউলিয়া হবার গুজব শিক্ষিত সচেতন ব্যক্তিদের মাঝেও সন্দেহের দানা বেধে। অনেকেই প্রশ্ন করেন, আচ্ছা ভাই বলুন তো ব্যাংকিং সেক্টর কি সত্যি দেউলিয়া হতে চলেছে? তাদের নানাভাবে বুঝানোর চেষ্টা করা হলেও সন্দেহ পুরোপুরি দূর করা যায়নি। সরকারের একজন দায়িত্বশীল সচিব এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য উপস্থাপনকালে বলেছিলেন, ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে এমন গুজবের কারণে আমানতকারিরা ব্যাংকিং সেক্টর থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা উত্তোলন করে নিয়েছে। উত্তোলিত অর্থের কতটা পরবর্তীতে ব্যাংকে ফিরে এসেছিল তা সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব হয়নি। যে কোনো গুজব বা আতঙ্ক ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। কারণ ব্যাংক ব্যবসায় অন্যান্য সাধারণ ব্যবসায়ের মতো নয়। ব্যাংক পরিচালিত হয় আমানতকারিদের অর্থে এবং প্রশ্নাতীত বিশ্বাস এবং আস্থা না থাকলে ব্যাংকিং ব্যবসায় ধ্বস নামতে বাধ্য।
ব্যাংকিং ব্যবসায় সম্পর্কে সাধারণভাবে কিছু ভুল ধারনা প্রচলিত আছে। এমনকি যারা ব্যাংক সম্পর্কে অভিজ্ঞ তাদের মাঝেও কোনো কোনো সময় বিভ্রান্তি প্রত্যক্ষ করা যায়। যখন গুজব রটেছিল ব্যাংকিং সেক্টর দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে সেই সময় ব্যক্তি মালিকানাধীন এক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একটি জাতীয় দৈনিকে নিবন্ধ লিখেন। সেখানে তিনি লিখেছিলেন,মানুষ কেনো ব্যাংকে টাকা গচ্ছিত রাখেন। তিনি বলেছিলেন, ব্যাংকে মানুষের আমানত সংরক্ষণ করলে তার নিরাপত্তা নিয়ে কোনো রকম চিন্তা করতে হয় না। ইচ্ছা করলেই যখন-তখন টাকা উত্তোলন করা যায়। কিছু সুদ পাওয়া যায়। তাই মানুষ তাদের মূল্যবান উদ্বৃত্ত অর্থ ব্যাংকে সংরক্ষণ করেন। বাংলাদেশের কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হবার আশঙ্কা নেই। উল্লেখিত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বক্তব্য অস্বীকার করার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। তবে তার বক্তব্যে কিছু বিভ্রান্তি লক্ষ্য করা যায়,যা একজন এক্সপার্ট ব্যাংকারের নিকট থেকে প্রত্যাশিত ছিল না। তিনি লিখেছিলেন, ব্যাংক থেকে চাইলেই যখন-তখন অর্থ উত্তোলন করা যায়। তার এই বক্তব্য মোটেও সঠিক নয়। ব্যাংক সাধারণত কয়েক ধরনের অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করে থাকে। এর মধ্যে সঞ্চয়ী হিসাব বা সেভিংস অ্যাকাউন্ট, চলতি হিসাব বা কারেন্ট অ্যাকাউন্ট এবং ফিক্সড ডিপোজিট বা স্থায়ী আমানত উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে একমাত্র চলতি আমানত হতে চাইলেই যখন-তখন টাকা উত্তোলন করা যায়। এমন দিনে একাধিকবার টাকা উত্তোলন করা যায়। এই এ্যাকাউন্টের বিপরীতে কোনো সুদ প্রদান করা হয় না। যেহেতু চলতি হিসাব থেকে আমানতকারি যে কোনো সময় টাকা উত্তোলন করতে পারেন তাই ব্যাংক সাধারণত চলতি আমানতকৃত অর্থ কোনো দীর্ঘ মেয়াদি প্রকল্পে বিনিয়োগ করে না। সঞ্চয়ী হিসাব থেকে অর্থ উত্তোলন করা যায়। তবে অধিকাংশ ব্যাংক সঞ্চয়ী হিসাব থেকে সপ্তাহে দু’বারের বেশি টাকা উত্তোলনের অনুমতি দেয় না। আর উত্তোলিত অর্থের পরিমাণ যদি বড় অঙ্কের হয় তাহলে ব্যাংকের নির্দিষ্ট ফর্মে আগে নোটিশ দিতে হয়। আর স্থানীয় আমানত থেকে নির্দিষ্ট মেয়াদ পূর্তির আগে অর্থ উাত্তালন করা যায় না। আগে অর্থ উত্তোলন করা হলে ব্যাঙক সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে চুক্তি মোতাবেক সুদ প্রদানে বাধ্য থাকে না। কাজেই ব্যাংকের সব অ্যাকাউন্ট থেকে চাইলেই অর্থ উত্তোলন করা যায় এই বক্তব্য মোটেও সঠিক নয়। ব্যাংকে যে আমানত হিসাব খোলা হয় তার বেশির ভাগই ফিক্সড ডিপোজিট বা স্থায়ী আমানত। ব্যাংক স্থায়ী আমানতকৃত অর্থ বিভিন্ন প্রকল্পে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করতে পারে। কারণ ব্যাংক জানে আমানতকারিকে কখন এই টাকা ফেরৎ দিতে হবে।
ব্যাংকিং সেক্টর দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে এই গুজব যখন ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছিল যখন অনেকেই এ বিষয়ে পত্রিকার নিবন্ধ লিখে বলেছিলেন, দেশের ব্যাংকিং সেক্টর দেউলিয়া হবার কোনো আশঙ্কা নেই। তারা নানাভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন কেনো ব্যাংকিং সেক্টর দেউলিয়া হবে না। কিন্তু তাদের অনেকের বক্তব্যেই ব্যাংকিং সেক্টর কেনো দেউলিয়া হবে না তার প্রকৃত কারণ উল্লেখিত হয়নি। আমি এ সংক্রান্ত যতগুলো লেখা পড়েছি তার কোনোটিতেই ব্যাংক দেউলিয়া না হবার সঠিক কারণটি ব্যাখ্যায়িত হয়নি। দেশের ব্যাংকিং সেক্টর বর্তমানে এক জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সময় অতিবাহিত করছে। কোনো সেক্টরের কিছু প্রতিষ্ঠান খারাপ করতে পারে কিন্তু তাই বলে পুরো সেক্টর দেউলিয়া হয়ে যাবে এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। দেশে বর্তমানে ৬১টি ব্যাংক ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর মধ্যে অন্তত ৩০টি ব্যাংক ভালো অবস্থানে নেই। ১০টি ব্যাংক অত্যন্ত খারাপ অবস্থার মধ্যে রয়েছে। কিন্তু এসব ব্যাংকের একটিও দেউলিয়া হবার আশঙ্কা নেই। প্রথমত,সরকার চাচ্ছে না কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হোক। একটি ব্যাংক যেসব সব ব্যাংক অত্যন্ত দুর্বল অবস্থায় রয়েছে সেগুলোকে তুলনামূলক সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভুতকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটা মূলত দুর্বল ব্যাংকগুলোকে রক্ষা করার একটি কৌশল মাত্র।
আমরা যদি বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরের ইতিহাস পর্যালোচনা করি তাহলে দেখবো, স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত একটি ব্যাংকও সরকারিভাবে দেউলিয়া ঘোষণা করা হয়নি। যদিও অনেক ব্যাংক আছে যারা খুবই খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। তারপরও তাদের দেউলিয়া বা অবলুপ্তি ঘোষণা করা হয়নি।
বিশ্বে দু’ধরনের ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রত্যক্ষ করা যায়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ইউনিট ব্যাংকিং এবং অন্যটি ব্র্যাঞ্চ ব্যাংকিং। ইউনিট ব্যাংকিং ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এগুলো সামান্য দু’চারটি শাখা নিয়ে স্থাপিত হয়। এমন কি কোনো কোনো বিশেষ অঞ্চলের ব্যাংকিং চাহিদা মেটানোর জন্য ইউনিট ব্যাংক চালু করা হয়। কোনো কারণে এসব ব্যাংকের একটি বা দু’টি শাখা ব্যবসায়িকভাবে মার খেলে পুরো ব্যাংকিং ব্যবস্থা বিপর্যয়ের মধ্যে পতিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইউনিট ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রচলিত আছে। ফলে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ অর্থনৈতিক শক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংক দেউলিয়া হয় সবচেয়ে বেশি। গত দেড় শতাব্দিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৮ হাজার ব্যাংক দেউলিয়া হয়েছে বলে একটি অসমর্থিত সূত্রে জানা যায়। অর্থাৎ প্রতি দেশটিতে ১২০টি করে ব্যাংক ব্যাংক দেউলিয়া হয়েছে। অন্য একটি সূত্র মতে, ২০০৮ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর গড়ে ৯৩টি ব্যাংক দেউলিয়া হয়েছে। ২০০০ সাল থেকে ২০২৪ সাৃিৃল পর্যন্ত সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬৫টি ব্যাংক দেউলিয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৮২ শতাংশ ব্যাংক দেউলিয়া হয় ২০০৮ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে। ২০১০ সালে মোট ১৫৭টি ব্যাংক দেউলিয়া হয়। ২০০৭ সাল থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ৫০০ ব্যাংক দেউলিয়া হয় যাদের মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৯৫৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংক দেউলিয়া হওয়া একটি সাধারণ ঘটনা মাত্র।
কিন্তু যুক্তরাজ্যে কোনো ব্যাংক সাধারণত দেউলিয়া হয় না। নিকট অতীতে যুক্তরাজ্যে কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হবার নজীর নেই। যুক্তরাজ্যের ব্যাংকিং ব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে ব্র্যাঞ্চ ব্যাংকিং পদ্ধতিতে। ব্র্যাঞ্চ ব্যাংকিং পদ্ধতিতে ব্যাংকের সংখ্যা থাকে খুবই কম। কিন্তু তাদের শাখা থাকে অনেক বেশি। অর্থাৎ সামান্য সংখ্যক ব্যাংক পর্যাপ্ত সংখ্যক শাখার মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। ব্র্যাঞ্চ ব্যাংকিং ব্যবস্থার সবচেয়ে সুবিধা হচ্ছে কোনো সময় কিছু সংখ্যক শাখা ব্যবসায়িকভাবে খারাপ করলেও ব্যাংকটি দেউলিয়ার পর্যায়ে চলে যায় না। কোনো না কোনোভাবে ব্যাংক সারভাইভ করে। বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে বৃটিশ ব্যাংকিং ব্যবস্থা অনুসরণ করে আসছে। বাংলাদেশে ব্যাংকের সংখ্যা ৬১টি। তারা বিস্তর শাখার মাধ্যমে তাদের ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কোনো ব্যাংকের কিছু শাখা বিপর্যস্ত হলেও পুরো ব্যাংকটি কলাপস হবার পর্যায়ে চলে যায় না। পদ্ধতিগত কারণেই বাংলাদেশের কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হবার ন্যূনতম আশঙ্কা নেই। আর সরকারও চায় না কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হোক। কাজেই বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য দেউলিয়া আতঙ্ক কোনো সমস্যার সৃষ্টি করবে না।
বাংলাদেশে কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হবে না তাই বলে আমাদের নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থাকার কোনো অবকাশ নেই। সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্যমান ব্যাংকিং আইনে যে সব পরিবর্তন করা হয়েছে তা এই খাতের জন্য মারাত্মক বিপদের সৃষ্টি করেছে। আগামী ১০ থেকে ১১ বছর পর অনুধাবন করা যাবে আমাদের দেশের ব্যাংকিং সেক্টর কতটা বিপর্যয়ের মধ্যে পতিত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতিক কিছু আইনি পরিবর্তন সাধন করেছে। কিন্তু এগুলো কাদের স্বার্থে করা হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকিং সেক্টরের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে পর্বত প্রমান খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যর্থতা। বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য যেসব আইনি পরিবর্তন সাধন করেছে তা মূলত ঋণ খেলাপিদের স্বার্থ রক্ষায় নিবেদিত। বাংলাদেশ ব্যাংক ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি চিহ্নিত করতে চাচ্ছে। কিন্তু তারা নতুন আইনের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ সৃষ্টির সুযোগ করে দিয়েছেন। আগে কোনো শিল্পগোষ্ঠীর একটি সদস্য কোম্পানি ঋণ খেলাপি হলে গ্রুপের অবশিষ্ট কোম্পানিগুলো ব্যাংক ঋণ পাবার ক্ষেত্রে অযোগ্য ঘোষিত হতো। কিছু দিন আগে এই আইন পরিবর্তন করা হয়েছে। এখন থেকে কোনো শিল্পগোষ্ঠীর একটি শিল্প ইউনিট ঋণ খেলাপি হলেও অবশিষ্ট কোম্পানিগুলো ব্যাংক ঋণ পেতে পারবে। এটা কি ধরনের আইনি সংস্কার হলো?
২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের পরবর্তী বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালে দেশব্যাপী তিন মাসব্যাপী রাজনৈতিক আন্দোলনের সময় দেশ ব্যাপী সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সেই সময় দেশের উৎপাদন ইউনিটগুলো স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনি। সেই সময় দেশের একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠীর তৎপরতায় ৫০০ কোটি টাকা ও তদুর্ধ অঙ্কের খেলাপি ঋণ পুনর্গঠন করা হয়। মোট ১১টি বৃহৎ শিল্পাগোষ্ঠী এই সুযোগে তাদের খেলাপি ঋণ হিসাব দীর্ঘ দিনের জন্য পুন:তফঅসিলিকরণ করিয়ে নেয়। তখনই প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল, রাজনৈতিক কারণে শুধু কি ৫০০ কোটি টাকা ও তদুর্ধ অঙ্কের ঋণ খেলাপিরাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল? যারা কিছুটা কম ঋণ খেলাপি তারা কি ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি? এ ধরনের সুযোগ যদি দিতে হয় তাহলে তা সবার জন্য অবারিত করাই উচিৎ ছিল। কিছু দিন আগে ২ শতাংশ নগদ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে এক বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছরের জন্য ঋণ হিসাব পুন:তফসিলিকরণের সুযোগ দেয়া হয়েছে। প্রশ্ন হলো, মাত্রা ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ খেলাপিদের এ ধরনের অনৈতিক সুবিধা কেনো দেয়া হলো? আগে নিয়ম ছিল কোনো ঋণ হিসাব পুন:তফসিলিকরণ করতে হলে প্রথম বারের জন্য মোট খেলাপি ঋণের ১০ শতাংশ, দ্বিতীয় বার ২০ শতাংশ এবং তৃতীয় বার ৩০ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিতে হতো। মোট তিন বার ঋণ হিসাব পুন:তফসিলিকরণ করা যেতো। প্রতি বার পুন:তফসিলিকরণের মেয়াদ হতো ৩ বছর করে। আগে কোনো ঋণ হিসাব অবলোপন করতে হলে ঋণ হিসাবটি মন্দমানে শ্রেণিকৃত হবার পর ৫ বছর অতিক্রান্ত হবার পর উপযুক্ত আদালতে মামলা দায়ের পূর্বক শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ করে সেই ঋণ হিসাব অবলোপন করা যেতো। এখন কোনো ঋণ হিসাব মন্দ মানে শ্রেণিকৃত হবার পর ২ বছর অতিক্রান্ত হলেই অবলোপন করা যাচ্ছে। এ জন্য ৫ লাখ টাকার কম ঋণাঙ্কের জন্য মামলা দায়েরের শর্ত শিথিল করা হয়েছে। শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণের বিধান তুলে দেয়া হয়েছে।
এসব আইনি পরিবর্তন করা হয়েছে মূলত কিস্তি আদায় না করেই খেলাপি ঋণকে কৃত্রিমভাবে কমিয়ে দেখানোর জন্য। একজন অর্থনীতিবিদ বলেছেন,এসব আইনি পরিবর্তনের উদ্দেশ্য হচ্ছে কার্পেটের নিচে ময়লা রেখে ঘর পরিস্কার দেখানোর একটি কৌশল মাত্র। বাংলাদেশ ব্যাংক তার ব্যাংকিং সেক্টরের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে তার দায়িত্ব পালনে কতটা সফল হচ্ছে তা নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করছেন। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, একটি শক্তিশালি গোষ্ঠী বাংলাদেশ ব্যাংকের উপর সওয়ার হয়ে তাদের স্বার্থ হাসিল করে নিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক অসহায়ের মতো তাদের আজ্ঞাবহ হিসেবে কাজ করে চলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মুখে যতই বলুক না কোনো তারা খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বাস্তবে কিছুই হবেনা।
Posted ১২:৪৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪
প্রতিদিনের অর্থনীতি | Protidiner Arthonity