
আহমেদ সাইফুদ্দীন চৌধুরী | সোমবার, ১১ আগস্ট ২০২৫ | প্রিন্ট | 594 বার পঠিত
নন-লাইফ বীমা খাতে সামনের দিনে কিছু নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ খাতের উন্নয়নে এখনও কিছু সীমাবদ্ধতা বিদ্যমান, যা অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে।
প্রথমত, নির্ধারিত এজেন্ট কমিশনের বাইরে অতিরিক্ত কমিশন প্রদান এবং বিশ্ব বীমা বাজারের তুলনায় আমাদের প্রিমিয়াম হার অনেক বেশি। এসব কারণে বাজার প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। তাই ব্যবসা সংগ্রহের ক্ষেত্রে প্রচলিত এজেন্ট প্রথা বিলুপ্ত করে সেই ব্যয় মার্কেটিং এক্সিকিউটিভদের কাজে লাগানো প্রয়োজন।
দ্বিতীয়ত, নন-লাইফ বীমা খাতে পণ্যের বৈচিত্র্য বাড়ানো জরুরি। এ খাতে এখনো পণ্যের স্বল্পতা রয়েছে, নন-লাইফ বীমা ক্ষেত্রে বা পরিধি বিস্তারের জন্য বীমাকৃত খাতগুলো চিহ্নিত করে তা বাধ্যতামূলক করা একান্ত প্রয়োজন। এছাড়া, এ শিল্পের পরিধি বাড়াতে হলে নন-লাইফ বীমা খাতের নিয়ম ও নীতিমালাগুলো পর্যালোচনা করা দরকার, সবাই মিলে যদি এই বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়, তাহলে বীমা খাত দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
সরকারি ব্যবসার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত সাধারণ বীমা কর্পোরেশন শতভাগ সরকারি ব্যবসা আন্ডাররাইট করলে খাতটি আরও শক্তিশালী হবে। বর্তমানে ৫০ শতাংশ সরকারি ব্যবসা বেসরকারি নন-লাইফ কোম্পানির মধ্যে বণ্টন করা হয়। এই হার সমানভাবে না দিয়ে পুরোটা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে দিলে খাতটির আরো উন্নতি হবে।
নন-লাইফ বীমা শিল্পে স্বচ্ছ ও প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টির জন্য নন-ট্যারিফ মার্কেট বিবেচনা করা সময়োপযোগী। কারণ বর্তমানে বাংলাদেশে ট্যারিফ মার্কেটের প্রিমিয়াম হার বিশ্ববাজারের তুলনায় বেশি, যা অতিরিক্ত কমিশন প্রদানের প্রবণতা বাড়ায়। তাছাড়া, নন-ট্যারিফ মার্কেটের ফলে আমরা বিশ্বের বীমা সেবার সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক বীমা সেবা প্রদানে সক্ষম হব। এতে নন-লাইফ বীমা খাতে প্রিমিয়াম বৃদ্ধির অপার সম্ভাবনা রয়েছে।
পুনঃবীমার ক্ষেত্রেও সংস্কার প্রয়োজন। বর্তমানে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ৫০ শতাংশ বাধ্যতামূলকভাবে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের সঙ্গে এবং বাকি ৫০ শতাংশ বিদেশি বাজারে করা যায়। এই অনুপাত পরিবর্তন করে ৩০ শতাংশ সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের সঙ্গে এবং ৭০ শতাংশ বিদেশি বাজারে করার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। ৭০ শতাংশ অংশে কোম্পানিগুলো চাইলে স্থানীয় বা বিদেশি পুনঃবীমাকারীর সঙ্গে চুক্তি করতে পারবে।
নতুন পণ্য উদ্ভাবনে উৎসাহ দিতে যে কোম্পানি প্রথম কোনো পণ্য বাজারজাত করবে, তাকে একটি নির্দিষ্ট পরীক্ষামূলক সময়ের জন্য এককভাবে বিপণনের সুযোগ দেওয়া উচিত। সফল হলে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) অনুমোদন নিয়ে অন্যান্য কোম্পানিকেও বাজারজাত করার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। এতে নিয়মনীতির জটিলতা কিছুটা কমবে এবং উদ্ভাবনে আগ্রহ বাড়বে।
বীমা দাবী নিষ্পত্তি হলো নন-লাইফ বীমা কোম্পানির সক্ষমতার অন্যতম মানদণ্ড। তাই দাবি নিষ্পত্তির বর্তমান প্রক্রিয়া সহজ করা একান্ত প্রয়োজন। একইভাবে প্রিমিয়াম পরিশোধের নিয়মও কিছুটা শিথিল হওয়া দরকার। বর্তমানে প্রিমিয়াম পরিশোধের পরের দিন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে; এটি এক মাস পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে। এক মাস পরও পরিশোধ না হলে প্রতিদিনের জন্য ১% হারে জরিমানা বা আর্থিক শাস্তি আরোপ করা যেতে পারে।
সবশেষে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও স্টেকহোল্ডাররা উদ্যোগী হলে নন-লাইফ বীমা খাতকে আরও কার্যকর ও স্বচ্ছ করা সম্ভব। এতে গ্রাহকদের আস্থা বাড়বে, সঠিক বীমা কভারেজ নেওয়ার প্রবণতা বাড়বে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে এ খাতের অবদান আরও সুদৃঢ় হবে।
লেখক- মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা
বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি পিএলসি
Posted ১২:০১ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১১ আগস্ট ২০২৫
প্রতিদিনের অর্থনীতি | Protidiner Arthonity