শুক্রবার ৬ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বীমা খাতের উন্নয়নে বীমা আইন সংশোধনের উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   78 বার পঠিত

বীমা খাতের উন্নয়নে বীমা আইন সংশোধনের উদ্যোগ

বীমা খাতে গ্রাহক ও কোম্পানির স্বার্থ যথাযথ সংরক্ষণ ও অন্যান্য আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বীমা আইন-২০১০ যুগোপযোগী ও কার্যকরী করতে ৫০টি ধারা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।

আইনটি সংশোধনের লক্ষ্যে গত ২৮ মার্চ আইডিআরএ’র ওয়েবসাইটে এর খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে। স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকে নানা সময়ে পাওয়া মতামত ও অন্যান্য দেশের আইন পর্যালোচনা করে খসড়া আইনের ধারাগুলো সংশোধন, সংযোজন ও বিয়োজনের প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে। যার উপর সংশ্লিষ্ট অংশীজন, বিশেষজ্ঞ ও জনসাধারণের সুচিন্তিত মতামত চাওয়া হয়েছে।

স্টেকহোল্ডারদের ওই খসড়ার বিষয়ে আগামী ১৫ কার্যদিবসের (২৪ এপ্রিল) মধ্যে মতামত দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মতামত না পাওয়া গেলে আপত্তি, মতামত নেই মর্মে আইডিআরএ পরবর্তী প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে।

ইতোমধ্যে বীমা আইন সংশোধনের খসড়া কপির অনুলিপি বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশনের সভাপতি, সব লাইফ ও নন-লাইফ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের সভাপতি, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমির পরিচালক বরাবর পাঠানো হয়েছে।

নতুন একটি ধারার সংযোজন প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নিরপেক্ষ পরিচালক অর্থ এইরূপ ব্যক্তি, যিনি বিমাকারীর ব্যবস্থাপনা ও শেয়ারধারক থেকে স্বাধীন এবং যিনি প্রযোজ্য আইন, বিধি ও প্রবিধান পরিপালন নিশ্চিত করে বিমাকারীর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মতামত দেবেন।

কেবল বিমাকারীর স্বার্থে নিজ মতামত দেবেন এবং বিমাকারীর বা বিমাকারী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে যার অতীত, বর্তমান বা ভবিষ্যৎ কোন স্বার্থের বিষয় জড়িত নেই।

এছাড়া আইডিআরের অনুমোদন ব্যতীত বিমাকারী তার নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান বা সহ-প্রতিষ্ঠান থেকে এর পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডার বা তাদের পরিবার বা তাদের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কোনো ঋণ দিতে বা অন্য কোনভাবে আর্থিক সুবিধা দিতে পারবে না।

প্রত্যেক বিমাকারী আইডিআরের অনুমোদন মোতাবেক প্রয়োজনীয় সংখ্যক একচ্যুয়ারি নিয়োগ করবেন। তার যোগ্যতা, দায়িত্ব, সুবিধা ও শর্তগুলো নিয়ন্ত্রক সংস্থা নির্ধারণ করবে।

বর্তমান আইনে বলা হয়েছে, লাইফ ইনস্যুরেন্স ব্যবসার জন্য নিবন্ধিত প্রত্যেক বিমাকারী আইডিআরের অনুমোদন নিয়ে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে একজন একচ্যুয়ারি নিয়োগ করবে। তার যোগ্যতা, দায়িত্ব এবং অন্যান্য সুবিধা ও শর্তগুলো প্রবিধানের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে।

নতুন আরেক সংযোজন প্রস্তাবে বলা হয়েছে—আইডিআরএ নির্ধারিত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে অনুমোদন মোতাবেক প্রতিষ্ঠানের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা বা সচিব হিসেবে নিয়োগ করতে হবে।

এতে আরও বলা হয়েছে, বিমাকারীর অনুমোদিত কোনো প্রধান অর্থ কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠান সচিবকে আইডিআরের পূর্বানুমতি ছাড়া চাকরিচুত্য বা বরখাস্ত করা যাবে না। এভাবে চাকরি হারানোর পর তিনি পরবর্তী পাঁচ বছর বিমা প্রতিষ্ঠানে চাকরির যোগ্য হবেন না।

আইডিআরএ এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রধান অর্থ কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠান সচিব এবং বিমাকারী বা এই বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয় এই ধরনের কাজ করেছে কী না এবং এক্ষেত্রে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে লিখিত আদেশের মাধ্যমে চাকরিচ্যুত করতে হবে।

আরেকটি ধারার সংশোধনে প্রস্তাব করা হয়েছে—কোন ব্যক্তি বিভ্রান্তিকর, মিথ্যা বা প্রতারণামূলক বলে জানেন, এমন বিবরণী, আশ্বাস, পূর্বাভাস দ্বারা, বা প্রতারণামূলক পূর্বাভাস কোনো ব্যক্তিকে কোনো বিমাকারীর সঙ্গে বিমা চুক্তির প্রস্তাবে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করলে তিনি এই অপরাধে অভিযুক্ত হবেন এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে অনধিক ২০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড হবে। সেই ব্যক্তি তিন বছরের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

অপর আরেক ধারার সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে—বীমা আইন ২০১০-এর মতো কোনো বিধান না থাকলে কোনো বিমাকারীর কোন পরিচালক, শেয়ার হোল্ডার, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, ব্যবস্থাপক বা অন্য কর্মকর্তা এই আইনের কোনো বিধান পালনে ব্যর্থ হলে তাকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা ও সর্বনিম্ন এক লাখ টাকা এবং লঙ্ঘন অব্যাহত থাকলে সেই সময় প্রতিদিনের জন্য অনধিক ১০ হাজার টাকা অতিরিক্ত অর্থ জরিমানা করা যাবে। বর্তমান আইনে যা এক লাখ টাকা, ৫০ হাজার টাকা ও পাঁচ হাজার টাকা।

আইডিআরের পরিচালক (নন-লাইফ) ও মুখপাত্র মো. জাহাঙ্গীর আলম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘এই আইনটি ১৩ বছর আগে করা হয়েছিল। বর্তমানে পরিস্থিতি অনেক বদলেছে। তাই আইনটিকে সার্বজনীন করার জন্য কিছু ধারায় সুস্পষ্টীকরণের দরকার আছে। আবার ইনস্যুরেন্স ইন্ডাস্ট্রির অনেক বিষয় আছে যা বর্তমান আইনে কাভার করে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আবার গ্রাহক ও ইন্ডাস্ট্রির স্বার্থে কিছু নতুন ধারা সংযোজন ও পুরাতন ধারা বিয়োজন করার প্রয়োজন আছে। তাই আইনটি সংশোধন করা হচ্ছে।’

বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি একেএম মনিরুল হক বলেন, ‘আমরা বীমা আইন ২০১০-এর সংশোধনীর খসড়ার প্রস্তাবনাটা পেয়েছি। অনেকগুলো ধারা সংযোজন ও সংশোধন হতে যাচ্ছে। এই বিষয়টাকে নীতিগতভাবে স্বাগত জানানো হয়েছে।’

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৩:১৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

প্রতিদিনের অর্থনীতি |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

April 2024
SSMTWTF
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930 

এক ক্লিকে বিভাগের খবর

সম্পাদক:
এম এ খালেক
Contact

মাকসুম ম্যানশন (৪র্থ তলা), ১২৭, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

০১৮৮৫৩৮৬৩৩০

E-mail: protidinerarthonity@gmail.com