
| বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫ | প্রিন্ট | 1727 বার পঠিত
জুলাই বিপ্লবের ধারাবাহিকতায় দায়িত্ব পাওয়া বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) এক বছর পূর্তিতে বীমা খাতের সংকট ও সম্ভাবনা তুলে ধরে সংস্কারের অগ্রগতির কথা জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ড. এম আসলাম আলম। বুধবার (২ জুলাই) সংস্থাটির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেন; দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা, বকেয়া বীমা দাবি ও গ্রাহক আস্থার সংকটে বিধ্বস্ত বীমা খাতকে পুনরুজ্জীবিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক, আইনগত ও ডিজিটাল এই তিন খাতে সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন ।
ড. এম আসলাম আলম বলেন, আমরা এখনো পূর্ণ সংস্কার সম্পন্ন করিনি, তবে একটি সংস্কার রূপরেখা দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছি। এটি চূড়ান্ত নয়- সংশ্লিষ্ট অংশীজনের মতামত ও সম্মতির ভিত্তিতে ধারাবাহিকভাবে আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের পথ সুগম করা হবে।
তিনি বলেন, বীমা খাতে সংকট এখন খুবই স্পষ্ট। শুধুমাত্র লাইফ বীমা খাতেই ১৩ লাখ গ্রাহক প্রায় ৪ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা দাবি করে অপেক্ষায় আছেন, যা এখনো পরিশোধ হয়নি। বর্তমানে লাইফ বীমার ৪৫ শতাংশ এবং নন-লাইফ বীমার প্রায় ৪৭ শতাংশ দাবি বকেয়া রয়েছে। টাকার হিসাবে যা লাইফ বীমার ক্ষেত্রে ৩৪ শতাংশ এবং নন-লাইফ বীমার ৬৭ শতাংশ।
তিনি আরো বলেন, লাইফ বীমার ক্ষেত্রে যেহেতু বিপুল সংখ্যক গ্রাহক বীমা দাবি পাচ্ছে না তখন কোম্পানির সার্বিক আর্থিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে দেখতে পাই লাইফ বীমা ক্ষেত্রে ১৫টি প্রতিষ্ঠান উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে, ১৫টি মধ্যম ঝুঁকিতে এবং স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে ৬টি কোম্পানি। তিনি বলেন, এর মধ্যে যে কয়টি কোম্পানি উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে সেগুলো আনভায়াবল (টিকে থাকতে অক্ষম) পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। তবে যেসব কোম্পানি মধ্যম ঝুঁকিতে রয়েছে তাদের সমস্যাগুলো নিরসনযোগ্য, এগুলো ঠিক করা যাবে।
গ্রাহকের আস্থা সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, বীমা খাতে ১৪ বছরে ৫৪ লক্ষ পলিসি হ্রাস পেয়েছে। তিনি বলেন, শুধুমাত্র ২০২৪ সালে ২৪ হাজার ৮৫২টি অভিযোগ পেয়েছি কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে। এই বিপুল সংখ্যক অভিযোগ প্রসেস করা আমাদের জন্য একটা বিশাল বোঝা হয়ে যাচ্ছে। এমনিতেই আমাদের জনবলের সংকট রয়েছে।
বীমা খাতের পেনিট্রেশন এর বিষয়ে ড. এম আসলাম আলম বলেন, জিডিপির আকার অনুসারে বীমা খাতে কি পরিমাণ আস্থার সংকট রয়েছে তা ফুটে উঠে। তিনি বলেন, ২০১০ সালে বীমা খাতের পেনিট্রেশন যেখানে ০.৯৪ শতাংশ ছিলো ২০২৩ সালে এসে তা ০.৪১ শতাংশে পৌঁছে গেছে। যেখানে অর্ধেকের বেশি কমে গেছে। ২০২৪ সালে সেটা আরো কমে গেছে। বিগত এই সময়ে কোম্পানির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু পেনিট্রেশন বৃদ্ধি পায়নি বরং কমেছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. এম আসলাম আলম বলেন, ১৭টি নন লাইফ বীমা কোম্পানির আর্থিক অবস্থা উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। বীমা দাবি পরিশোধ না করাসহ বীমা কোম্পানিগুলোর বিভিন্ন ক্রাইটেরিয়া বা মানদণ্ড যাচাই-পর্যালোচনা করে এই মূল্যায়ন করা হয়েছে। দুর্বল বীমা কোম্পানির একিভূতকরণ প্রসঙ্গে ড. এম আসলাম আলম বলেন, এসব বীমা দাবি সময় মতো পরিশোধ করা এবং মানুষের আস্থা বাড়াতে বিভিন্ন আইন ও বিধি করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ব্যাংক রেজল্যুশনের আদলে বীমাকারির রেজল্যুশন অধ্যাদেশ প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়েছে। এর আলোকে কেবল বীমা প্রতিষ্ঠান একীভূত হবে তেমন না; অবসায়ন, অধিগ্রহণসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হবে।
বীমা কোম্পানির নিবন্ধন নবায়ন ফি হাজারে ১ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাবের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, আইডিআরএ’র সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। তাছাড়া বর্তমানে আমাদের লোকবল সংকট রয়েছে। লোকবল বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। লোকবল বাড়লে তখন আইডিআরএ’র খরচ বাড়বে। সবকিছু বিবেচনা করেই নিবন্ধন নবায়ন ফি বাড়ানো হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান ছাড়াও সংস্থাটির সদস্য (প্রশাসন) মো. ফজলুল হক, সদস্য (আইন) তানজিনা ইসমাইল, সদস্য (নন-লাইফ) মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক এবং সদস্য (লাইফ) মো. আপেল মাহমুদ, পরামর্শক (মিডিয়া ও যোগাযোগ) সাইফুন্নাহার সুমি সহ নির্বাহী পরিচালকগণ উপস্থিত ছিলেন।
Posted ৬:৪১ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫
প্রতিদিনের অর্থনীতি | Protidiner Arthonity