
| বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫ | প্রিন্ট | 123 বার পঠিত
সংস্কারের নামে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তির উদ্যোগকে স্থগিত রাখার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্যাক্স ল ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএলএ) এবং ঢাকা ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়েশন (ডিটিবিএ)। সংস্কারের নামে রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্তির খসড়া অধ্যাদেশকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে দেশের রাজস্ব ব্যবস্থা ও রাজস্ব প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা এবং রাষ্ট্রের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করে অবিলম্বে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছে সংগঠন দুটির নেতৃবৃন্দ।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ট্যাক্স লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ঢাকা ট্যাকসেস্ বার অ্যাসোসিয়েশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্ত নয়, সংস্কার চাই’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
এতে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কর আইনজীবী ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঢাকা ট্যাকসেস্ বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু নাছের মজুমদার (মেসবাহ)।
লিখিত বক্তব্যে ঢাকা ট্যাকসেস্ বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু নাছের মজুমদার (মেসবাহ) বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড শত বছরের পুরোনো একটি প্রতিষ্ঠান। আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় রাজস্ব সংগ্রহ ও প্রশাসনের জন্য একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র রাজস্ব কর্তৃপক্ষ থাকা অত্যাবশ্যক। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এই ধরনের সংস্থা বিদ্যমান যা রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় পেশাদারিত্ব, নিরপেক্ষতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি প্রণীত একটি খসড়া অধ্যাদেশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই অধ্যাদেশটি বাস্তবায়িত হলে, বাংলাদেশের স্বতন্ত্র রাজস্ব সংস্থাটি বিলুপ্ত হবে, যা রাজস্ব ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এক গভীর শূন্যতা সৃষ্টি করবে এবং দেশের রাজস্ব ব্যবস্থার অপূরণীয় ক্ষতি হবে। এনবিআরকে সংস্কার করে আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন। সেটা না করে উল্টো পথে হাঁটছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর ফল কখনোই দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে না।
তিনি বলেন, আমরা কর আইনজীবীরা বাংলাদেশের রাজস্ব ব্যবস্থার প্রধান অংশীজন অথচ আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা বা মতবিনিময় করা হয়নি। অংশীজনদের মতামত ছাড়া, কোনো ধরনের গবেষণা ছাড়া তড়িঘড়ি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্তির খসড়া অধ্যাদেশ, উপদেষ্টা পরিষদ কার স্বার্থে অনুমোদন দিল এটা জাতি জানতে চায়। রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত খসড়া অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে, বাতিল চাই।
আমরা প্রয়োজনীয় সব সংস্কারের পক্ষে, রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্তির পক্ষে নই বলেও মন্তব্য করেন তিনি। প্রয়োজনে আয়কর নীতি বিভাগকে সংস্কার করে আরও শক্তিশালী করা যেতে পারে বলেও অভিমত জানান তিনি। তিনি বলেন, দেশেল সর্বোচ্চ রাজস্ব সংস্থা হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে ১৬৬ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ থেকে শুরু করে বার্ষিক গড়ে প্রায় ১৪শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩ লাখ ৬২ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে হীন স্বার্থে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে জিডিপিকে অতি মূল্যায়িত করায় অধিকাংশ সময় উল্লেখযোগ্য রাজস্ব প্রবৃদ্ধি অর্জন সত্ত্বেও কর জিডিপি অনুপাত কখনো কাঙ্খিত পর্যায়ে যেতে পারেনি যা অন্তবর্তী সরকারের আমলে গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ত কমিটির প্রতিবেদনে ও প্রতিফলিত হয়েছে।
তিনি বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কোনো ব্যর্থ প্রতিষ্ঠান নয়। রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্তির কারণ সম্পর্কে জাতি অবহিত নহে। এমতাবস্থায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে বিলুপ্ত না করে রাজস্ব সংস্কারের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম, যেমন টেকসই রাজস্বনীতি প্রণয়ন, রাজস্ব বিষয়ক আইনসমূহ প্রয়োজনীয় সংশোধন, রাজস্ব ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন ও অটোমেশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থ্য বৃদ্ধিসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম বাস্তবায়নে সরকারকে উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছি। অবিলম্বে দেশের রাজস্ব ব্যবস্থা ও রাজস্ব প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতা সৃষ্টিকারী এবং রাষ্ট্রের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলপ্তির খসড়া অধ্যাদেশ বাতিল করতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কর আইনজীবী ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান বলেন, ‘প্রতিবছর বাজেট সহায়তার নামে আইএমএফ বা অন্যান্য জায়গায় থেকে সহায়তা এনে বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার দেশকে ঋণে জর্জরিত করেছে। বর্তমানে কমবেশি সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকার রাজস্ব আহরিত হয়, সেটি ১০ লাখ কোটি টাকায় উন্নীত করার একটি কর্ম-পরিকল্পনা করছিলাম। সেই মুহুর্তে দেখলাম রাজস্ব বিভাগ ভেঙে দিচ্ছে। এর ফলে রাজস্ব প্রশাসনে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। রাজস্ব অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। এনবিআর ভেঙে দিয়ে দুটি বিভাগ করছে। এতে এনবিআর কর্মকর্তাদের মধ্যে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। সকল কর্মকর্তারা অস্তিত্ব সংকটে রয়েছেন। রাজস্ব বোর্ড ভেঙে দিয়ে কোন সংস্কারের দিকে যাচ্ছে, তা নিয়ে আমরা এখন ধোয়াশার মধ্যে রয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ বিদায়ের পর অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশকে গণতন্ত্রে ফিরতে হবে। জাতীয় নির্বাচন সংক্রান্ত সংস্কার এখন জরুরি। তবে এনবিআর সংস্কার এই মুহুর্তে জরুরি নয়। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সংস্কার-ই বেশি জরুরি। রাজস্ব আহরণের সংস্কার করতে হবে সকল স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে আলাপ আলোচনা করে। এই সংস্কার করতে হবে এমন ভাবে জাতে কোনক্রমেই রাজস্ব আহরণ নিম্নমুখী না হয়। কর্মকর্তারা যেন হতাশায় না ভুগেন। এটি (এনবিআর সংস্কার) চার্টার করে নির্বাচিত সরকারের জন্যে রেখে যেতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই দুই মাসেই রাজস্ব আহরণ মুখ থুবড়ে পড়েছে। এই সরকার এমন কোন পদক্ষেপ নেবে না যা দেশ বিরোধী ও রাজস্ব আহরণ বিরোধী। অনতিবিলম্বে সরকারকে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হবে। তড়িঘড়ি করে কোন অঙ্গণের, দেশের বা সংস্থার প্রেসক্রিপশনে এনবিআর বিলুপ্ত করলে সেটি হিতে বিপরীত হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখনই এনবিআর বিলুপ্তকরণ স্থগিত করুন। দুটি বিভাগ করেছেন, সেটি স্থগিত করুন। অব্যাহতি বিভাগ অর্থ মন্ত্রণালয়ে নিয়েছেন, সেটি স্থগিত করুন। আশা করি এই সরকার আজকের পর থেকে এই কার্যক্রম স্থগিত করবে। এই সরকার দেশ ও গণবিরোধী কোন সিদ্ধান্ত নেবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্যাক্স ল’ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রমিজ উদ্দিন আহমেদ, অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল মতিন, সদস্য, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল, ঢাকা ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ এইচ এম মাহাবুবুস সালেকীন প্রমুখ।
Posted ৪:৩৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫
প্রতিদিনের অর্থনীতি | Protidiner Arthonity